আগমনী গান, শিউলি সকাল
আল্পনা আঁকা প্রকৃতির মাঝে পুজো মন্দপ, ঢাকের মাতাল রব শরতের দেবী আহ্বান ... মেঘলা আকাশে সাদাটে মেঘের ভেলার আবির্ভাব জানান দিচ্ছে যে তিনি আসছেন। সে যে আমার শরৎ, আমার শারদীয়া। বর্ষা তাঁর পথকে করেছিল দুর্গম। হৃদয় পরিণত হয়েছিল অলসতার জীর্ণ প্রাসাদে। শরৎ আসতেই যা শুভ্রতার মোহনীয় প্রাসাদে রূপ নিয়েছে। হালকা কুয়াশা আর জমে ওঠা বিন্দু বিন্দু শিশিরই যে শারদ প্রভাতের প্রথম সলজ্জ উপহার। এর ওপর রৌদ্রবরণে ছড়িয়ে আছে অজস্র মুক্তোদানা। ক্ষান্ত বর্ষণ সুনীল আকাশের পটভূমিকায় জলহারা লঘুভার মেঘপুঞ্জ। ধীর মন্থর ছন্দে কেবলই সৌন্দর্যের তরে তার নিরুদ্দেশ যাত্রা। একদিকে নদী-সরসীর বুকে কুসুম-কোমলের নয়নাভিরাম শোভা, অপরদিকে শ্যামশস্য হিল্লোলে আনন্দ গুঞ্জন। এ এক অপূর্ব কোমলতা। শরৎ-রাত্রির চাঁদ মাটির শ্যামলিমায় আপন আবেশে ঢেলে দিচ্ছে জোছনাধারা। মন কাড়া শিউলির সুবাসে আমি আর থাকতে পারলাম কই? যতদূর দৃষ্টি যায় ততদূরই যেন নৈশ-নীলাকাশে রজতশুভ্র জোছনার উদাস করা হাতছানি।অদূরে উত্সবের রং লেগেছে। ভুবন বিজয়ী সে রূপে আমি মুগ্ধ। কবি নজরুলের ভাষায়— ‘বাজে আনন্দ বেণু শারদিয়া মিলন পিয়াসী ডাকে পিয়া পিয়া, সৌরভ মধু ভারে বেদনায় কার শ্রম শতদল টলে আজি টলমল।’ কল্পনার সূক্ষ্ম বুননে অন্তর থেকে বেরিয়ে আসা ভাষার মধ্যে ভেসে ওঠে যে শব্দ, তাকে গাঁথলে সৃষ্টি হয় কাব্য। অনুভবে তা মিষ্ট, আঘাতে উচ্ছিষ্ট, অনুরাগে তা সৃষ্ট- তাইতো উৎকৃষ্ট। জাগতিক নিয়মের অনুরেখার মিশ্রফল এই কাব্য। চেতনায় স্পর্শিত হলে তখনই শোনা যায় তার মর্মরিত ধ্বনি। বোঝা যায় তার অর্থ, বোঝা যায় সংবেদনশীল মনের এই নিঃশব্দ’র ভাস্কর্য। তা’না হলে তা হয় নিছক বর্ণমালা। মনের আয়নায় গড়া এই virtual image যারা দেখতে পায় তারা পায় কাব্যের রস। তারা একাত্ম হয় সেই সৃষ্টি ধর্মী মনের সৃজনশীলতায়।প্রতিদিন হাজার হাজার কবিতার জন্ম হয়। অযত্ন আর অবেহলায় এই সকল কবিতা সঠিক ভাবে বেড়ে ওঠে না। তাই অসুস্থ হয়ে পড়ে কবিতা। আমরা তাই কবিতার সঠিক পরিবেশ তৈরি করতে সব দ্বায়-দ্বায়িত্ব কাঁধে নিয়ে মাঠে নেমে পড়তে হবে।কবিতার জয় হবেই।কবিতা হল মুক্তমঞ্চ। কবি মনের কথা মঞ্চায়িত করতে হবে। সমসাময়িক কবিদের দৈনন্দিন চিন্তাভাবনা এবং পাঠকদের মাঝে এক ধরনের নিবিড় সেতু বন্ধন গড়ে তুলতে হবে।কবিতা আর কবিতা। একটা সময় এমন ছিল যখন কবিতা পড়তে হবে শুনলেই মাথা খারাপ হয়ে যেত। স্কুলের বইগুলোতে ‘কবিতা’ কে শুধুই বাংলা পরীক্ষার একটা অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে কবিতার সাথে সত্যিকারের পরিচয় হতে বেশিদিন সময় লাগে না। বাংলা কবিতার যে বিশাল ভান্ডার রয়েছে তা আর যেকোন ভাষার সাহিত্যভান্ডারের তুলনায় কম নয়। পৃথিবীর সব সাহিত্যে কবিতা বা কাব্য একটা নিজস্ব জায়গা করে নিয়েছে। তার অপ্রতিরোধ্য গমন সাহিত্যের বুকে নতুন দ্বার উদ্ঘাটন করেছে। কবিরা সেখানে নিজস্ব সৃষ্টি নৈপুণ্যে বিরাজ করছেন। তাঁদের মনন ও অন্তরকে ছুঁতে পারার মধ্যে পাঠকের যে আনন্দ লুকিয়ে আছে তা কবিতা ও কাব্যের সার্থকতার কথা ও সাফল্যের পরিচয়। কবি তার আবেগকে শব্দ বন্দী করে চিত্রায়িত করেন এই সৃষ্টিতে। তাঁর এই তথাকথিত ‘পাগলামি’ ভাষা পায় ছন্দে, অলংকৃত হয় শব্দের মনজাত প্রয়োগে। কবি সেখানে হয়ে ওঠেন শব্দের কারিগর। জলকে দু ভাবে ছোঁয়া যায় এক জলে নেমে আর এক জল ছুঁলে কি হবে সেটা ভেবে। কবিরা হলেন দ্বিতীয় জগতের বাসিন্দা। তাঁরা চান পাঠক প্রথম জগতের রস আস্বাদন করুন। আর সেই স্বাদে কাব্যের তথা সাহিত্যের নবজাগরণ ঘটে মনের সুনীল কিনারে।এ শতাব্দীর প্রথমার্ধে প্রমথ চৌধুরী বলেছিলেন, “লাইব্রেরীর প্রয়োজনীয়তা স্কুল কলেজের চেয়ে বেশি।” আর মোতাহার হোসেন চৌধুরী লাইব্রেরীকে 'জাতির সভ্যতা ও উন্নতির মাপকাঠি হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাদের কথার সাথে তাল মিলিয়ে বলতেই হয় মানুষকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে উন্নত জাতি গঠনে লাইব্রেরীর কোন বিকল্প নেই।সুতরাং আমাদের লাইব্রেরী স্থাপনের মাধ্যমে কবিতা চর্চার প্রসার করতে হবে। আচ্ছা! মনে পড়ে? পুজো সংখ্যাগুলো ঘিরে একটা সময় কি অনন্ত প্রতীক্ষা, ভাবালুতা, আবেশ আর উন্মাদনা ঘিরে ধরত আমাদের! যখন ছিল না কোনও কেবল চ্যানেল, ইন্টারনেট আর মোবাইল। কিশোর-কিশোরী, স্কুল পড়ুয়া, যুবক-যুবতী, কাকু-জ্যেঠু থেকে মাসিমা-বৌদিদের বিনোদন বলতে ছিল কয়েকটি পুজো সংখ্যা। আর তাই নিয়ে কি কাড়াকাড়ি! এমনও হাজার হাজার বাঙালি আছেন যাঁদের পুজোর আগে অথবা পাবলিশ হওয়া মাত্র আনন্দলোক, আনন্দমেলা, দেশ, সানন্দা, আনন্দবাজার পত্রিকা হাতের কাছে না পেয়ে রাতের ঘুম আসেনি! পুজো সংখ্যার স্টক সীমিত জানলে মন খারাপ হওয়ার ভয়ে আগে থেকেই হামলে পড়া। এবারের সাতকাহন বিশেষ পুজো-ও ঈদ সংখ্যা প্রকাশ করার সময় রবীন্দ্রনাথের কাছে ছোট্ট একফোঁটা ঋণ স্বীকার করতে হয় । আবার বাঙালীর পুজোর বিশেষ আকর্ষণ ‘পুজো-সংখ্যা’ সেটিও ছিল রবীন্দ্রনাথের কল্পনাপ্রসূত । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই প্রথম ভেবেছিলেন পুজোর সময় বাঙালী পাঠকের হাতে ছুটির অবকাশে একখানি মোটাসোটা পত্রিকা তুলে দেবার কথা । তাই তাঁর নির্দেশে ১২৯৮ সালের অগ্রহায়ণ মাসে ‘সাধনা’ পত্রিকার যে প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয় সেই কাগজেরই ১২৯৯ সালে ভাদ্র-আশ্বিন যুগ্মসংখ্যা বেরোয় বেশ স্থুলায়তনের পুজোসংখ্যা হিসেবে । কলকাতায় এই পত্রিকার সম্পাদনার সহায়ক ছিলেন বলেন্দ্রনাথ । ঐ সংখ্যায় কবির ‘স্বর্ণমৃগ’ নামে একটি দীর্ঘ গল্প ছিল । এবং সে গল্প যে পুজোসংখ্যায় প্রকাশের যোগ্য তা বোঝা যায় কয়েকটি লাইন পড়লে ‘ আশ্বিনমাসে দুর্গোত্সব নিকটবর্তী হইল। চতুর্থীর দিন হইতে ঘাটে নৌকা আসিয়া লাগিতে লাগিল । প্রবাসীরা দেশে ফিরিয়া আসিতেছে…’ ইত্যাদিআবার‘মেঘমুক্ত আকাশে শরতের সূর্যকিরণ উত্সবের হাস্যের মত ব্যাপ্ত হইয়া পড়িয়াছে,পক্কপ্রায় ধান্যক্ষেত্র থর থর করিয়া কাঁপিতেছে , বর্ষাধৌত সতেজ তরুপল্লব নব শীতবায়ুতে সির সির করিয়া উঠিতেছে ..’ রবীন্দ্রনাথের কাছে দুর্গোৎসব কেবল মাটির মূর্তিপূজা বলেই প্রতিভাত হয়নি । শারদোৎসবকে ঘিরে উনি দেখেছিলেন বাঙালির হৃদয়ের উচ্ছ্বাস উদ্দীপনা মাখা এক শিল্প কলা, সাহিত্য এবং সর্বোপরি সৃষ্টির এক নবজাগরণ । আর তাই বুঝি দিনে দিনে আমরা লক্ষ্য করি কত রকমের বৈচিত্র্যময় থিম পুজো এবং তাদের নান্দনিক শিল্পকলা । নতুন গান রচনা, পুজোসংখ্যায় নতুন সাহিত্য, কবিতা, গল্প প্রকাশ করার উত্তেজনা । আর সর্বোপরি আনন্দের হিল্লোল ওঠা প্রাণে বাঙালির সার্বজনীন ভ্রাতৃত্ব এবং মৈত্রীর জোয়ার । পুজোর আনন্দে বারবার তাই কবিপ্রসঙ্গ এসে পড়ে । ওনার ‘ পুজোর সাজ’ কবিতায় ‘ আশ্বিনের মাঝামাঝি উঠিল বাজনা বাজি, পুজোর সময় এল কাছে, মধুবিধু দুই ভাই ছুটোছুটি করে তাই আনন্দে দুহাত তুলি নাচে “ ঠিক যেন বাঙলার আপামর জন সাধারণের ঘরের কচিকাঁচার ছবি । আজ পুজোর ছুটি কাছে এগিয়ে এলে আমাদের মনের অবস্থা যেমন হয় সেই উতলা উন্মনা মনের স্বীকার হতেন কবি নিজেও । ছোটবেলার সেই গান ‘ মেঘের কোলে রোদ হেসেছে, বাদল গেছে টুটি আজ আমাদের ছুটিরে ভাই আজ আমাদের ছুটি ‘ এতো সেই শরত ঋতুরই গান যা এখনো আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা কে আকর্ষণ করে । ১৯৩২ সালে অক্টোবর মাসে কবি নির্মলকুমারীকে এক চিঠিতে লিখলেন ‘ মনে হচ্ছে ঐ শিউলিগাছগুলোও উন্মনা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে , দুটো একটা চলতি মেঘের দিকে তাকিয়ে । ছুটির ঘন্টা বাজছে আমার বুকের মধ্যে, শিরায় শিরায় রব উঠেছে দৌড় দৌড় দৌড় ‘ তাই এবার সাতকাহনের পুজোসংখ্যা প্রাক্-কথন লিখতে বসে আমার মনে হচ্ছে ছোট্ট আমার নৌকাখানি সাতকাহন কিন্তু পুজ আর ঈদ -এর আনন্দে ভরে উঠেছে , সেজে উঠেছে নতুন করে । আমার বন্ধুদের সাড়া পেয়ে আমি আপ্লুত। আবার সেই শারদ মজলিশে রবিঠাকুরকে স্মরণ করেই না হয় বলি ‘ছুটির দিনে কেমন সুরে, পুজোর সানাই বাজে দূরে’। হিন্দুদের সবচেয়ে বড় উৎসবের নাম শারদিয়া দূর্গোৎসব , এটি সার্বজনীন । পূজা ও ঈদ -এর , ধর্মীয় বিষয়টি যারা পূজার্তি তাদের , কিন্তু উৎসবে সবাই সামিল হয়ে খুশি করতে পারবেন । খুশিটি সবার , আলোক্কজ্বল পরিবেশে কে না খুশি অনুভব করে !! বর্তমান সার্বজনীনতার সংজ্ঞা আমার ব্যক্তিগত জীবন থেকে কতটুকু দিতে পারলাম তা পাঠকরা হিসেব করবেন । প্রায় ৪০০ বছর আগে সবার অংশগ্রহনে দূর্গাপূজা শুরু হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে । এর আগে ঘরোয়া পূজা, পারিবারিক পূজা, মন্দিরে পূজা ইত্যাদি হিসেবে দেবির দূর্গার পূজা করা হত । পূজাকে এ অবস্হা থেকে বাইরে নিয়ে এসেছিলেন হুগলির বারো বন্ধু । তারা শুরু করেছিলেন , এজন্য বারোয়ারী পূজা ও বলা হয় । কারন কারো ব্যক্তিগত পূজাতে সবার অংশগ্রহন করার নেমতন্ন করা হয় না । আমার বাড়িতে ও দূর্গা পূজা হচ্ছে, ঘটে , ওখানে শুধুই তারাই যেতে পারবে যাদের নেমতন্ন করা হয়েছে । সার্বজনীনে সেই বিধি নিষেধ নেই, থাকার কোন অবস্হা ও নেই । প্রতি বছরেই দুইটি ঈদ আসে,এবং চলেও যায় । যেমন :ঈদ-উল-আযহা কাল।আমরা প্রায় সবাই এই ঈদ কম,বেশী উৎযাপন করব।কিন্তু এই ঈদকে নিয়ে কিচ্ছু ত্যাগের ইতিহাস রয়েছে ।এই সর্ম্পকি কিছু কথা: মুসলিম উম্মাহ হযরত ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আ.)-এর মহান ত্যাগ ও কুরবানীর নিদর্শন হিসেবে প্রতিবছর যিলহাজ্জ মাসের ১০ তারিখে হালাল পশু যবেহ ও দু‘রাকাত ওয়াজিব সালাত একত্রে আদায়ের মাধ্যমে যে আনন্দ উৎসব পালন করে থাকে, তাকেই ঈদ-উল-আযহা হিসেবে আমরা জানি। তাছাড়া হাদীসে রাসূল (সা.) -এর বক্তব্যের আলোকে প্রত্যেক জুম‘আর দিনকেও ঈদ বলা হয়। রাসূলূল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আাল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে বাত্সরিক ঈদ হিসেবে দু’টি দিন দিয়েছেন; ঈদ-উল-ফিতরের দিন এবং ঈদ-উল-আযহার দিন। এ দিনে নির্মল আনন্দলাভের জন্য সুস্থ বিনোদনের অনুমতি রয়েছে। বস্তুত মুসলিম জাতির পিতা সাইয়্যেদুনা ইবরাহীম (আ.) আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে একমাত্র পুত্রকে কুরবানী করার মতো যে মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, সে সুন্নাত যথাযথ মর্যদায় পালনার্থেই এই কুরবানীর ঈদ। কুরবানীকে আরবী ভাষায় ‘ঊযহিয়্যা’ বলা হয়। এর অর্থ ঐ পশু যা কুরবানীর দিন যবেহ করা হয়। শরী‘আতের পরিভাষায়, আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টিলাভের নিমিত্তে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট পশু যবেহ করাকে কুরবানী বলা হয়। নজরুলের ঈদের কয়েকটি কবিতা সম্পর্কে সামান্য দু’ এক কথা শুধু বলবো। ঈদের উপর লেখা নজরুলের যেসব কবিতা ও গান আমি হাতের কাছে পেয়েছি, সেগুলি হলো ‘ঈদ-মোবারক’ (প্রথম পঙক্তিঃ শত যোজনের কতো মরুভূমি গো), ‘কৃষকের ঈদ’ (বেলাল! বেলাল! হেলাল উঠেছে পশ্চিম আসমানে), ‘ঈদের চাঁদ’ (সিড়িওয়ালাদের দুয়ারে এসেছে আজ), ‘আজ ঈদ ঈদ ঈদ খুশীর ঈদ এলো ঈদ’, ‘ঈদজ্জোহার তকবীর শোন ঈদগাহে’, ‘বক্রীদ’ (শহীদানদের ঈদ এলো বকরীদ), ‘ওরে ও নতুন ঈদের চাঁদ’, ‘এল আবার ঈদ, ফিরে এল আবার ঈদ’, ‘ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারত ঈদ’, ‘শহীদী ঈদগাহে আজ জমায়ত ভারি’, এবং ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’ ১৩৩৫ সালে প্রথম প্রকাশিত কবির “জিঞ্জীর” কাব্যগ্রন্থভুক্ত ‘ঈদ মোবারক’ কবিতার তৃতীয় স্তবকটি লক্ষ্য করুণঃ ও গো কাল সাঁঝে দ্বিতীয়া চাঁদের ইশারা কোন মুজ্দা এনেছে, সুখে ডগমগ মুকুলী মন!আশাবরী সুরে ঝুরে সানাই। আতর সুবাসে কাতর হলো গো পাথর-দিল, দিলে দিলে আজ বন্ধকী দেনা- নাই দলিল, কুবলিয়াতের নাই বালাই। গোটা কবিতা জুড়েই এই রকম বন্ধনহীন স্ফূর্তির আবেগ। তাছাড়াও অজস্র কবিতায় নজরুল বারবার একটা জিনিসের উপর জোর দিয়েছেন। কোনো আচার-অনুষ্ঠানই অন্তরের সত্যের চাইতে বড়ো নয়।ঈশ্বর/ আল্লাহকে পাবার জ ন্য যোগী বা দরবেশ সাজার প্রয়োজন নেই। নিজের হৃদয়ের দিকে তাকাবার পরামর্শ দিয়ে কবি বলেছেনঃ এই তোর মন্দির মসজিদ এই তোর কাশী বৃন্দাবন, আপন পানে ফিরে চল, কোথা তুই তীর্থে যাবি, মন! এই তোর মক্কা-মদিনা, জগন্নাথ-ক্ষেত্র এই হৃদয় ।। পুজো ও ঈদ এমনই এক সার্বজনীন ধর্মীয় উৎসব- যা মানুষে মানুষে সৌহার্দ্যরে বন্ধনকে সুদৃঢ় করে তোলে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলিয়ে দেয়। আনন্দ উদযাপনের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের নৈকট্য লাভের সুযোগ আসে পুজো ও ঈদের মাধ্যমে। তাই এই দুই উৎসব উপলক্ষ করে যা কিছুই করা হোক না কেনো তার মধ্যে পবিত্রতার ছোঁয়া লেগে যায়।উৎসবে যেমন হৃদয় থেকে হৃদয়ে সুদৃঢ় বন্ধনের সৃষ্টি হয়; তেমনি সাহিত্যকর্মও সার্বজনীন। বিশেষ কোনো গোষ্ঠী বা ধর্মের জন্য আদালা আলাদাভাবে সাহিত্য রচিত হয় না। একই কাব্য-সাহিত্য সব মানুষের জন্যই রচিত হয়। যেমন অনেক মুসলমান কবি রাধাকৃষ্ণের প্রেমকে উপজীব্য করে গীত রচনা করেছেন- আবার অনেক হিন্দু কবিও কোরআনের বাণী ভিত্তি করে কবিতা লিখেছেন। কোনো লেখা যখন সুখপাঠ্য হয় বা লেখা যখন পাঠকের হৃদয় স্পর্শ করে তখন পাঠক আর লেখকের মধ্যে হৃদয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কেউ কবিদের অবদানের কাছাকাছি আসতে সক্ষম হননি। সবমিলিয়ে দুর্গা পুজো ও ঈদ সর্ববৃহৎ দুটি ধর্মীয় উৎসব। এই দুই উৎসব শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদযাপিত হোক এটা সকলের কাম্য।সবাই পুজো এবং ঈদ এ খুব আনন্দ করুন , সাতকাহন পড়ুন এবং আপনাদের সুচিন্তিত মতামত আমাদের জানান যাতে আমদের কবি বন্ধুরা আরও কবিতা লিখতে উৎসাহিত বোধ করেন চারিদিকে শিউলি-কাশের ইশারা, আকাশজুড়ে পেঁজাতুলোর মেঘের সাথে দু এক টুকরো উড়ন্ত কালোমেঘের আলো আঁধারি খেলা আর গ্রামেগঞ্জে শহরে উৎসবের চালচিত্র সবকিছুর মধ্যে বেঁচে থাক পুজোর সাহিত্য, আন্তর্জালিক পুজোসংখ্যা আমাদের সকলের প্রিয় সাতকাহন। |
সাতকাহনের কবিগণ
|