বাঘের চোখ দুটো ও ছিলো কালো। কালো কালো চোখের পলক পড়তো না।আমি নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে দেখেছি বাঘের অনেক কষ্ট হয়।আমার চোখ বেয়ে জল পড়তো। বাঘের কষ্টে নাকি আমার কষ্টে? জানিনা।
আমি তাকিয়ে থেকে চিন্তা করতাম কেন তার মুখ হা করা। কেন তার চোখ স্থির। বুঝতে পারতাম না। আমার অবুঝ মন ভয়ে ভয়ে তাকাতো।
বাঘের সেই মুখের দুপাশে চারটে বড় বড় গোঁফ ছিল। গোঁফের চারপাশে দুষ্টু ময়লা জমতো। আমি সেই ময়লা দেখে নিজের ঠোঁট কামড়ে গোঁফ তোলার চেষ্টা করতাম। আজে বাজে চেষ্টা। একবার ছোট মামা দুষ্টামি করে আমার মুখে তার ঝামা মার্কা মুখ ঘষে দিয়ে বলেছিল- যা তোর মুখে এখন দাড়ি উঠে যাবে। তুই বড় হয়ে যাবি। বাবার মত গোঁফ উঠবে। আমি সেদিন চিৎকার করে কেঁদেছিলাম। গোঁফ ওঠার ভয়ে কেঁদেছিলাম। দাড়ি ওঠার ভয়ে কেঁদেছিলাম। বাঘের মত গোঁফ উঠলে তাতে ময়লা জমবে এই ভয়ে কেঁদেছিলাম। বাঘের তাতে কোন ভ্রুক্ষেপ ছিলোনা। সে নিষ্পলক তাকিয়েই থাকতো। তাকিয়েই থাকতো।
একবার আমার খুব রাগ উঠে গ্যালো। রেগে মেগে আমি কাগুজে পিস্তল বানালাম। একটা স্কুলের খাতা থেকে ছিড়ে নিয়ে তিনকোনা ভাজকরে নিয়ে নিচের দিকে বটে নিলাম। তারপর দুই ভাঁজ করে নিলাম অতৃপ্ত মুঠো। হয়ে গেল একটা । আমি অদৃশ্য বুলেট ছুড়লাম-
ইয়া ডিসিয়া
ডিসিয়া
ডিসিয়া
ডিসুম
ডিসুম
ডিসুম
কিন্তু বাঘের তাতে কিছু ই হলনা। আমার সামনে নেতিয়ে পড়লোনা সে। আমার রাগ পড়ে গেল। কিন্তু বাঘ পড়লোনা দেয়াল থেকে। আমি তাকিয়ে থাকলাম জানো? নির্বিষ শিকারীর মত কান্নাগ্রস্থ চোখে তাকিয়ে থাকলাম। আমার কান্না বেড়ে গ্যালো। আমি কাঁদলাম। কারন সেই মরা বাঘটাকে আমি দ্বিতীয় বার মেরে ফেলতে পারিনি। আহা মেরে ফেলতে পারিনি।।